অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
হিমালয়ের দেশ নেপালে দূর্নীতি, বৈষম্য, বেকারত্ব ও রাজনীতিবিদদের আচরণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এরই মধ্যে সরকার নিয়মনীতি না মানায় তরুণ প্রজন্ম ২৬ টি অভিযোগ আনে। এক পর্যায়ে সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভে নামে তরুনদের একটি বড় অংশ। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে। কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে কাঁদুনে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পুলিশ। এতে নিহত হন ১৯ জন, আহত হন শতাধিক মানুষ। বিক্ষোভের মুখে ৯ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন নেপাল সরকার। তারপরও বিক্ষোভে নামেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় নিহত হন আরও তিনজন। এমন পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবারই তাঁর পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল।
প্রেসিডেন্টের কাছে লেখা পদত্যাগ পত্রে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি লেখেন ‘দেশে যে প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি পদত্যাগ করছি। এটি আজ (গত মঙ্গলবার) থেকে কার্যকর হবে। আমার এ পদত্যাগের উদ্দেশ্য সমস্যার সমাধানে আরও সহজ হবে। একই সঙ্গে সমস্যা যেন সংবিধান অনুসারে রাজনৈতিক ভাবে সমাধান করা যায় তাতে সহায়তা করা।’ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর সামনে আসার পর পার্লামেন্ট এলাকায় জড়ো হন তরুণরা। পদত্যাগের খবরে উচ্ছ¦াস প্রকাশ করেন তাঁরা। অনেকে আবার দিচ্ছিলেন স্লোগান। পার্লামেন্ট ভবনে তরুণদের লিখতে দেখা যায়, ‘আমরা জিতেছি’। ওই সময় পার্লামেন্ট ভবনে লাগা আগুন থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরও সরকারের প্রতি ক্ষোভ কমেনি মানুষের। কারফিউ উপেক্ষা করে পার্লামেন্ট ভবনসহ কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হন তাঁরা। দাঙ্গা পুলিশের সদস্যদের লক্ষ্য করে ছুঁড়েন ইট-পাটকেল। পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দিতেও দেখা যায়। অনেক সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেন সাধারণ মানুষ। উপ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেলের বাড়িতে ইট-পাটকেল ছুঁড়া হয়। হামলা হয় সোমবার পদত্যাগ করা সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাড়িতেও। বিরোধী দলের প্রধান পুষ্পকমল দখলের বাসভবনও হামলার শিকার হয়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও মঙ্গলবার আগুন দেয়া হয়। টেলিভিশনে সম্প্রচার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করেন। ওই সময় ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাক কর্মীরা বেশ কিছুটা দূর থেকে সবকিছু দেখছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করলে নেপালের সেনারা হেলিকাপ্টরে করে মন্ত্রীদেরকে তাঁদের বাসভবন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেন। এদিকে কাঠমন্ডুতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ বাড়তে থাকলে মঙ্গলবার ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে নেপালের প্রেসিডেন্টও পদত্যাগ করেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে একটি রাজনৈতিক শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। নেপালের সেনাবাহিনী শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে।
নেপালের এ বিক্ষোভকে ‘জেন-জিদের বিক্ষোভ’ বলা হচ্ছে। এ বিক্ষোভের মূল ভূমিকায় রয়েছে দেশটির তরুণ সমাজ। তরুণদের মুখে শোনা যায়, ‘দূনীর্তি দেশের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। এখনই জাতির, প্রধানমন্ত্রীর এবং ক্ষমতায় থাকা সবার পরিবর্তনের সময়।’
বিবিসির এক সংবাদিক আনবারাসান ইথিরাজানের মতে, ‘নেপালের এ বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে চলা অব্যবস্থাপনার কারণে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষের অসন্তোষ, ক্ষমতার জন্য বছরের পর বছর চলে আসা রাজনৈতিক টানাপোড়েন অনেককে- বিশেষ করে তরুণদের হতাশ করছে।’ তবে বৃহস্পতিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করাই, সোমবার শুরু হওয়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভের মূল কারণ নয় বরং এটা একটি উপলক্ষ্য মাত্র। যা অনুঘটক হিসাবে অন্যান্য বিষয় কাজ করেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য, সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য এবং দূনীর্তির মত বিষয়গুলিই হচ্ছে উল্লেখযোগ্য কারণ। সবচেয়ে বড় কথা, তরুণদের একটি বড় অংশ পুরোনো নেতৃত্বকে মানতে পারছিল না। তাই বিক্ষোভ এতটা তুঙ্গে উঠেছে।
বিমানবন্দর নির্মাণের জালিয়াতি, দপ্তরে চাঁদাবাজি, নেপাল টেলিকমে অর্থ আত্মসাৎ এসব কেলেঙ্কারিতে রীতিমত তোলপাড় হয়েছে। সোনা চোরাচালানে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ দেখেছে, বড় নেতাদের আসলে কোন সাজা হয় না। সেখানে তদন্ত দীর্ঘায়িত হয়, নিচের কর্মচারীরা শাস্তি পান অথচ ক্ষমতাবানরা বেঁচে যান। এদিকে দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যস্ত নেপালিরা কর দেন, কিন্তু এর বিনিময়ে সড়ক, স্কুল, হাসপাতালের উন্নতি পান না। মন্ত্রীরা শুধু নিজেদের পকেটই ভারী করেন। এসব কারণে এবারে তরুণদের বিক্ষুদ্ধ করেছে। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ।
বিগত ৭২ ঘন্টায় ক্ষমতার সিংহাসন থেকে নেমে গিয়েছেন তিন জন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমেই আছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। ক্ষমতায় বসার এক বছর পার হওয়ার আগেই পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর দলের ভেতর-বাইরে চাপের মুখে অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। এরপর আছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু। পার্লামেন্ট এমপিদের আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পরদিন মঙ্গলবার তিনি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন-জি’র প্রবল প্রতিবাদের মুখে অবশেষে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এই তালিকায় আরও নাম কি যুক্ত হতে যাচ্ছে এই বছর? হু নৌজ! বিশ্বে আসলে হচ্ছেটা কী!
দারিদ্রের সংজ্ঞা গোটা বিশ্বে একরকম। সুনীতির সংজ্ঞাটি নিয়ে বিভিন্ন মতাবলম্বীদের ভিন্নতা থাকলেও প্রায় একই রকম। আর দূর্নীতির সংজ্ঞা বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জাতিতে, বিভিন বর্ণে ও বিভিন্ন ধর্মে একটাই। আর এ দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়েছে শ্রীলংকা ও নেপাল। আর বিক্ষোভের মাধ্যম কিন্তু তরুণ সমাজ। আমাদের দেশে তরুণসমাজ একত্রিত হয়ে জুলাই বিপ্লব সম্পন্ন করেছে। তাতে অপশাসনমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। দুঃশাসন, অত্যাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের একটি ছোট আন্দোলন ও ঐক্য দেখা গেল সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে। বিভিন আন্দোলনের সুতিকাগারই হচ্ছে ডাকসু। যদি সমাজের সর্বক্ষেত্রে দূর্নীতি বন্ধ না হয় তবে ডাকসুই নেপালের তরুণদের মত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করে হয়ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে দূর্নীতিমুক্ত-দারিদ্রমুক্ত। জয় হোক তরুণ্যের।
অধ্যাপক ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হিমালয়ের দেশ নেপালে দূর্নীতি, বৈষম্য, বেকারত্ব ও রাজনীতিবিদদের আচরণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এরই মধ্যে সরকার নিয়মনীতি না মানায় তরুণ প্রজন্ম ২৬ টি অভিযোগ আনে। এক পর্যায়ে সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভে নামে তরুনদের একটি বড় অংশ। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে। কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে কাঁদুনে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পুলিশ। এতে নিহত হন ১৯ জন, আহত হন শতাধিক মানুষ। বিক্ষোভের মুখে ৯ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন নেপাল সরকার। তারপরও বিক্ষোভে নামেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় নিহত হন আরও তিনজন। এমন পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবারই তাঁর পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল।
প্রেসিডেন্টের কাছে লেখা পদত্যাগ পত্রে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি লেখেন ‘দেশে যে প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি পদত্যাগ করছি। এটি আজ (গত মঙ্গলবার) থেকে কার্যকর হবে। আমার এ পদত্যাগের উদ্দেশ্য সমস্যার সমাধানে আরও সহজ হবে। একই সঙ্গে সমস্যা যেন সংবিধান অনুসারে রাজনৈতিক ভাবে সমাধান করা যায় তাতে সহায়তা করা।’ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর সামনে আসার পর পার্লামেন্ট এলাকায় জড়ো হন তরুণরা। পদত্যাগের খবরে উচ্ছ¦াস প্রকাশ করেন তাঁরা। অনেকে আবার দিচ্ছিলেন স্লোগান। পার্লামেন্ট ভবনে তরুণদের লিখতে দেখা যায়, ‘আমরা জিতেছি’। ওই সময় পার্লামেন্ট ভবনে লাগা আগুন থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরও সরকারের প্রতি ক্ষোভ কমেনি মানুষের। কারফিউ উপেক্ষা করে পার্লামেন্ট ভবনসহ কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হন তাঁরা। দাঙ্গা পুলিশের সদস্যদের লক্ষ্য করে ছুঁড়েন ইট-পাটকেল। পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দিতেও দেখা যায়। অনেক সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেন সাধারণ মানুষ। উপ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেলের বাড়িতে ইট-পাটকেল ছুঁড়া হয়। হামলা হয় সোমবার পদত্যাগ করা সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাড়িতেও। বিরোধী দলের প্রধান পুষ্পকমল দখলের বাসভবনও হামলার শিকার হয়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও মঙ্গলবার আগুন দেয়া হয়। টেলিভিশনে সম্প্রচার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করেন। ওই সময় ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাক কর্মীরা বেশ কিছুটা দূর থেকে সবকিছু দেখছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করলে নেপালের সেনারা হেলিকাপ্টরে করে মন্ত্রীদেরকে তাঁদের বাসভবন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেন। এদিকে কাঠমন্ডুতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ বাড়তে থাকলে মঙ্গলবার ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে নেপালের প্রেসিডেন্টও পদত্যাগ করেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে একটি রাজনৈতিক শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। নেপালের সেনাবাহিনী শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে।
নেপালের এ বিক্ষোভকে ‘জেন-জিদের বিক্ষোভ’ বলা হচ্ছে। এ বিক্ষোভের মূল ভূমিকায় রয়েছে দেশটির তরুণ সমাজ। তরুণদের মুখে শোনা যায়, ‘দূনীর্তি দেশের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। এখনই জাতির, প্রধানমন্ত্রীর এবং ক্ষমতায় থাকা সবার পরিবর্তনের সময়।’
বিবিসির এক সংবাদিক আনবারাসান ইথিরাজানের মতে, ‘নেপালের এ বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে চলা অব্যবস্থাপনার কারণে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষের অসন্তোষ, ক্ষমতার জন্য বছরের পর বছর চলে আসা রাজনৈতিক টানাপোড়েন অনেককে- বিশেষ করে তরুণদের হতাশ করছে।’ তবে বৃহস্পতিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করাই, সোমবার শুরু হওয়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভের মূল কারণ নয় বরং এটা একটি উপলক্ষ্য মাত্র। যা অনুঘটক হিসাবে অন্যান্য বিষয় কাজ করেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য, সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য এবং দূনীর্তির মত বিষয়গুলিই হচ্ছে উল্লেখযোগ্য কারণ। সবচেয়ে বড় কথা, তরুণদের একটি বড় অংশ পুরোনো নেতৃত্বকে মানতে পারছিল না। তাই বিক্ষোভ এতটা তুঙ্গে উঠেছে।
বিমানবন্দর নির্মাণের জালিয়াতি, দপ্তরে চাঁদাবাজি, নেপাল টেলিকমে অর্থ আত্মসাৎ এসব কেলেঙ্কারিতে রীতিমত তোলপাড় হয়েছে। সোনা চোরাচালানে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ দেখেছে, বড় নেতাদের আসলে কোন সাজা হয় না। সেখানে তদন্ত দীর্ঘায়িত হয়, নিচের কর্মচারীরা শাস্তি পান অথচ ক্ষমতাবানরা বেঁচে যান। এদিকে দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যস্ত নেপালিরা কর দেন, কিন্তু এর বিনিময়ে সড়ক, স্কুল, হাসপাতালের উন্নতি পান না। মন্ত্রীরা শুধু নিজেদের পকেটই ভারী করেন। এসব কারণে এবারে তরুণদের বিক্ষুদ্ধ করেছে। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ।
বিগত ৭২ ঘন্টায় ক্ষমতার সিংহাসন থেকে নেমে গিয়েছেন তিন জন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমেই আছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। ক্ষমতায় বসার এক বছর পার হওয়ার আগেই পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর দলের ভেতর-বাইরে চাপের মুখে অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। এরপর আছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু। পার্লামেন্ট এমপিদের আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পরদিন মঙ্গলবার তিনি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন-জি’র প্রবল প্রতিবাদের মুখে অবশেষে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এই তালিকায় আরও নাম কি যুক্ত হতে যাচ্ছে এই বছর? হু নৌজ! বিশ্বে আসলে হচ্ছেটা কী!
দারিদ্রের সংজ্ঞা গোটা বিশ্বে একরকম। সুনীতির সংজ্ঞাটি নিয়ে বিভিন্ন মতাবলম্বীদের ভিন্নতা থাকলেও প্রায় একই রকম। আর দূর্নীতির সংজ্ঞা বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জাতিতে, বিভিন বর্ণে ও বিভিন্ন ধর্মে একটাই। আর এ দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়েছে শ্রীলংকা ও নেপাল। আর বিক্ষোভের মাধ্যম কিন্তু তরুণ সমাজ। আমাদের দেশে তরুণসমাজ একত্রিত হয়ে জুলাই বিপ্লব সম্পন্ন করেছে। তাতে অপশাসনমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। দুঃশাসন, অত্যাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের একটি ছোট আন্দোলন ও ঐক্য দেখা গেল সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে। বিভিন আন্দোলনের সুতিকাগারই হচ্ছে ডাকসু। যদি সমাজের সর্বক্ষেত্রে দূর্নীতি বন্ধ না হয় তবে ডাকসুই নেপালের তরুণদের মত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করে হয়ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে দূর্নীতিমুক্ত-দারিদ্রমুক্ত। জয় হোক তরুণ্যের।
অধ্যাপক ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ