অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
গাছ-গাছালি খোলা জায়গা আর বাগানের শহর ছিল কুমিল্লা। ছোট একটি শহর আমাদের কুমিল্লা আমার বেড়ে উঠা শহরের উত্তরাঞ্চলে কালিয়াজুরি ও বিষ্ণুপুর এলাকায়। কান্দিরপাড় ছিল এর কেন্দ্র বিন্দু। বিষ্ণুপুর মোন্সেফ কোয়াটার, কালিয়াজুরী মাজার, ভাটপাড়ার পর গোমতীর বাঁধ, বিষ্ণুপুর গোরস্থান, কাপ্তান বাজার আর জর্জকোর্ট চত্বর, পোষ্ট অফিস সুজাবাদশা মসজিদ আর সার্কিট হাউসসহ মোগলটুলী, বিখ্যাত রাজগঞ্জ বাজার, চর্থা আর দারোগা বাড়ী, ভিক্টোরিয়া কলেজ আর রাণীর দীঘি, ষ্টেডিয়াম, ঈদগাহ, শিশুপার্ক আর কালেক্টরেট বিল্ডিং, সদর হাসপাতাল আর টমসম ব্রীজ এলাকাসহ আরও কতগুলি উল্লেখযোগ্য এলাকা নিয়েই ছিল কুমিল্লা শহর। কালিয়াজুরি মাজার, ছোটরা কবরস্থান, , বিষ্ণুপুর গোরস্থান ছিল বৃক্ষমেলায় আচ্ছাদিত, জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলে গোসল ও সাতারে ব্যস্ত হয়ে যেতাম লেংটার বাড়ীর পুষ্করিনীতে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একতালা, দোতালা থেকে বহুতল ভবনে ছেয়ে গেল সারা শহর। এখন আর কেউ বলতে পারবে না গোলাপজাম কি ফল, বেতফল কি জিনিস, ডেউয়া দেখতে কি রকম। শিক্ষা, স্থাস্থ্যসেবা, গ্রহণযোগ্য অবকাঠামো, পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে দেশে নামকরা ছিল আমাদের শহর। যানজট, দূষণ আর অপরিকল্পিত নগরায়নে শহরটিকে বাসযোগ্য রাখা দিনদিন কঠিন হয়ে পড়েছে।
একটু বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্নস্থানে জল জমে জলযট সৃষ্টি করে। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে ড্রেনের পানিতে সয়লাব হয় গোটা শহর আর ড্রেনের পানিতে আছে প্রত্যেক রাস্তার পাশ্বের বাসার সেনিটারি পাইপের কনটেন্ট। এতে যারা পা ভিজাচ্ছেন বা সেন্ডেল নিয়ে হাটছেন তারা সবাই এ সেনিটারি কনটেন্ট ধরে নিয়ে যাচ্ছেন, চর্মরোগ থেকে শুরু করে অনেক রোগব্যাধীতে ভুগছেন। অতএব পিভিসি পাইপ অথবা কংক্রীট দিয়ে ম্যানহাইট পাইপ দিয়ে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করলে শহরকে জলযট মুক্ত করা যাবে না।
যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে সবাইকে ভাগাড়ে ময়লা ফেলার অভ্যাস গড়তে হবে। সন্ধ্যার পর ওয়াটার সিল কন্টেইনার দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে ভাগাড়ে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে রাখতে হবে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থা চালু করে
পলিথিন রিসাইকেল, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও ফলের খোসা ও তরকারীর আবর্জনা থেকে কৃত্রিম সার উৎপাদন যত দ্রুত সম্ভব চালু করা উচিত পানির আধারসমূহ সংরক্ষণ করতে সিটি কর্পোরেশন প্রত্যেকটি আধারের চতুর্দিক বাধাই করে দেয়া উচিত। শুনা যাচ্ছে কুমিল্লা শহরের সৌন্দর্য্যের আধার ধর্মসাগরের চারটি পারই বাঁধাই করে চারটি পারে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে দেয়া হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ধর্মসাগর নামক জলাধারটি আমাদের ঐতিহ্য। একবিন্দু জলরাশি এখান থেকে কমানো যাবে না। জলরাশির আয়তন পাড় বাঁধাইয়ে যেন সংকুচিত না হয়। কারণ তালপুকুর ও রাণীর দীঘির ক্ষেত্রে জলরাশির আয়তন কমিয়ে আনা হয়েছে। ওয়াকওয়ের পাশে বাগান ও বৃক্ষায়ন চলবে কিন্তু কোন দোকান বা বাণিজ্য কেন্দ্র যেন না বসে, সে দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। তবে ধর্মসাগরে ওয়াকওয়ে না করে এখনকারমত রাখাই পরিবেশসম্মত। পুরাতন গোমতির দুই পাড় বাধাই ও সবুজায়ন করে বিশাল ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা যায়। গোমতীর গতিপথ নষ্ট করে হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে সেস্থলে ব্রিজ তৈরি করে ওয়াকওয়ে ও দুইপাড়ের জনগণের যোগাযোগ উন্নয়ন করে দিয়ে গোমাতীর চাঁদপুর থেকে কাপ্তানবাজার পর্যন্ত বোট সার্ভিস চালু করলে প্রাণভরে বাতাস খেতে খেতে ভ্রমণ করতে পারত। গোমাতীর পানি এখন দখল দূষণে যে অবস্থায় উপনিত, অচিরেই পুরাতন গোমতীর দুপারের অধিবাসীরা বিভিন্ন রোগে ও অসুবিধায় আক্রান্ত হতে বাধ্য।
প্রত্যেকটি ফ্যাক্টরীতে ঊঞচ বসিয়ে যদি তা শহরের বাহিরে ফেলা যায় তবে দক্ষিণ কোতয়ালীর লোকজন ইপিজেডের দূষিত পানির যন্ত্রনা থেকে রক্ষা পেত। সেন্ট্রাল ইটিপি ইপিজেডে থাকলেও নানা অজুহাতে কাজ করছেনা বিধায় প্রতিটি ফ্যাক্টরী ইটিপি চালু করে পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন করা জরুরী।
যানযট বন্ধ করতে হলে ফুটপাত ও রাস্তার শৌল্ডারের ভাসমান দোকানসমূহ বন্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। অনেক রাস্তার পার্শ্বে সিটি কর্পোরেশনের জায়গা আছে, যাতে তিন চার তলা ভবন তৈরি করে নীচতলায় গাড়ীর গ্যারেজ বা গাড়ী রাখার স্থান দেয়া যায়। এতে সমস্ত ভাসমান দোকানদারদের স্থাপনা হয়ে যাবে, সিটির সৌন্দর্য্য ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা হবে। রাজগঞ্জ বাজার, রাণীর বাজার মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং করে নীচতলা খালি রেখে এ অবস্থা বাস্তবায়ন করা যায়। রাস্তার চেয়ে ড্রেন উঁচা তাই রাস্তার পানি ড্রেনে যায় না। ড্রেনের পানি রাস্তায় নেমে আসে, তাই ড্রেনগুলো রাস্তার নীচে থাকতে হবে।
সবুজায়নের মারাত্মক অভাব। স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে বড় বড় বৃক্ষসমূহ নিধন করা হয়েছে। পার্কের পার্শ্বের রাস্তার গাছগুলি নিধন করা হয়েছে, আদালত রাস্তাটি ও বৃক্ষনিধনে আক্রান্ত ঐ সমস্ত স্থানসমূহে এবং রাস্তার পাশের শৌল্ডার সবুজায়নের নিমিত্তে বৃক্ষরাজি লাগিয়ে শহরকে অক্সিজেনে ভরপুর করা হোক। প্রত্যেক বাড়ীর নতুন ভবনের ছাদে বাগান বাধ্যতামূলক করে দিলে সবুজায়ন সম্পূর্ণ হবে আমাদের শহরে।
অনেক উৎসাহ বেড়েছে ছাদকৃষিতে মানুষ ভেবেই পাচ্ছে না আমাদের ছাদে পেয়ারা ফলানো সম্ভব। এ আগ্রহের স্থান থেকেই ছাদকৃষিতে কুমিল্লার লোকজন ছাদকৃষি নিয়ে আন্দোলিত হয়েছে। ছাদের সামান্য জায়গাটুকু কাজে লাগানোর জন্য এর চেয়ে বড় কোন উদ্যোগ থাকতে পারে না। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, গৃহিনী সবাই ছাদে চাষ করছেন লাউ, চালকুমড়া, শিম, ঝিঙ্গে, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম, গাজরসহ নানাধরনের সবজি। অনেকে মাল্টা, আম, লেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, ডালিমের মত ফলও ফলাচ্ছেন। এতে শুধু পারিবারিক চাহিদাই মিটছে না, স্বাস্থ্য সম্পন্ন নিরাপদ খাবারেরও নিশ্চয়তা আসছে। যারা ফলাচ্ছেন তারা মানসিক প্রশান্তিও পাচ্ছেন, সবুজায়নে নিজেকে নিবেদিত করতে পারছেন। বলাবলি করতে শুনা যায়, ছাদকৃষিতে উৎপন্ন ফলফলাদি আদান প্রদানের মাধ্যমে পাশের বাসার সঙ্গে হৃদ্যতা বাড়ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঋঅঙ অনেকদিন থেকে বলে আসছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সামলাতে জলবায়ু সহনশীল কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। ছাদকৃষি সেই প্রচেষ্টারই একটি অংশ এখন মানুষ ছাদকৃষির ব্যাপারটি বুঝে ফেলেছে। আগে যারা এটাকে নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা করেছিল তারাই এখন ছাদকৃষিকে স্বাগত জানাচ্ছে। প্রত্যেকটি শহরবাসী নিজের ছাদে ক্ষুদ্র কৃষক হয়ে উঠুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। দেখা যায়, ধীরে ধীরে অনেক ছাদ সবুজ রূপ নিচ্ছে। এতে কমছে তাপমাত্রা, বাড়ছে অক্সিজেন এবং শীতল হচ্ছে শহর। একই সঙ্গে পূরণ হচ্ছে মানুষের খাদ্য চাহিদার বিরাট একটা অংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও অনেকটা কমছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকগুলি একদিনে পরিবর্তন সম্ভব নয়। ছাদকৃষি আমাদের দেখিয়েছে একটি ছোট উদ্যোগও বড় পরিবর্তনের আশা জাগাতে পারে। প্রতিটি অট্টালিকাবাসী তাঁর ছাদে যদি কিছু গাছ লাগায়, তবে হাজার হাজার ছাদ একত্রিত হয়ে গড়ে তুলবে আমাদের সবুজ কুমিল্লা। এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। ধূসর ছাদকে সবুজায়নে ফেরানোর এক মহৎ উদ্যোগ বা সংগ্রাম। প্রতিবছর চাষযোগ্য জমি কমছে, নগরায়নে কমছে গ্রামীণ চাষযোগ্য ভূমি। এমন বাস্তবতার নিরিখে ছাদকৃষি আর বিলাসিতা নয়, বর্তমান সময়ের প্রয়োজনীয় দাবী।
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
গাছ-গাছালি খোলা জায়গা আর বাগানের শহর ছিল কুমিল্লা। ছোট একটি শহর আমাদের কুমিল্লা আমার বেড়ে উঠা শহরের উত্তরাঞ্চলে কালিয়াজুরি ও বিষ্ণুপুর এলাকায়। কান্দিরপাড় ছিল এর কেন্দ্র বিন্দু। বিষ্ণুপুর মোন্সেফ কোয়াটার, কালিয়াজুরী মাজার, ভাটপাড়ার পর গোমতীর বাঁধ, বিষ্ণুপুর গোরস্থান, কাপ্তান বাজার আর জর্জকোর্ট চত্বর, পোষ্ট অফিস সুজাবাদশা মসজিদ আর সার্কিট হাউসসহ মোগলটুলী, বিখ্যাত রাজগঞ্জ বাজার, চর্থা আর দারোগা বাড়ী, ভিক্টোরিয়া কলেজ আর রাণীর দীঘি, ষ্টেডিয়াম, ঈদগাহ, শিশুপার্ক আর কালেক্টরেট বিল্ডিং, সদর হাসপাতাল আর টমসম ব্রীজ এলাকাসহ আরও কতগুলি উল্লেখযোগ্য এলাকা নিয়েই ছিল কুমিল্লা শহর। কালিয়াজুরি মাজার, ছোটরা কবরস্থান, , বিষ্ণুপুর গোরস্থান ছিল বৃক্ষমেলায় আচ্ছাদিত, জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলে গোসল ও সাতারে ব্যস্ত হয়ে যেতাম লেংটার বাড়ীর পুষ্করিনীতে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একতালা, দোতালা থেকে বহুতল ভবনে ছেয়ে গেল সারা শহর। এখন আর কেউ বলতে পারবে না গোলাপজাম কি ফল, বেতফল কি জিনিস, ডেউয়া দেখতে কি রকম। শিক্ষা, স্থাস্থ্যসেবা, গ্রহণযোগ্য অবকাঠামো, পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে দেশে নামকরা ছিল আমাদের শহর। যানজট, দূষণ আর অপরিকল্পিত নগরায়নে শহরটিকে বাসযোগ্য রাখা দিনদিন কঠিন হয়ে পড়েছে।
একটু বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্নস্থানে জল জমে জলযট সৃষ্টি করে। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে ড্রেনের পানিতে সয়লাব হয় গোটা শহর আর ড্রেনের পানিতে আছে প্রত্যেক রাস্তার পাশ্বের বাসার সেনিটারি পাইপের কনটেন্ট। এতে যারা পা ভিজাচ্ছেন বা সেন্ডেল নিয়ে হাটছেন তারা সবাই এ সেনিটারি কনটেন্ট ধরে নিয়ে যাচ্ছেন, চর্মরোগ থেকে শুরু করে অনেক রোগব্যাধীতে ভুগছেন। অতএব পিভিসি পাইপ অথবা কংক্রীট দিয়ে ম্যানহাইট পাইপ দিয়ে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করলে শহরকে জলযট মুক্ত করা যাবে না।
যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে সবাইকে ভাগাড়ে ময়লা ফেলার অভ্যাস গড়তে হবে। সন্ধ্যার পর ওয়াটার সিল কন্টেইনার দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে ভাগাড়ে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে রাখতে হবে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থা চালু করে
পলিথিন রিসাইকেল, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও ফলের খোসা ও তরকারীর আবর্জনা থেকে কৃত্রিম সার উৎপাদন যত দ্রুত সম্ভব চালু করা উচিত পানির আধারসমূহ সংরক্ষণ করতে সিটি কর্পোরেশন প্রত্যেকটি আধারের চতুর্দিক বাধাই করে দেয়া উচিত। শুনা যাচ্ছে কুমিল্লা শহরের সৌন্দর্য্যের আধার ধর্মসাগরের চারটি পারই বাঁধাই করে চারটি পারে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে দেয়া হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ধর্মসাগর নামক জলাধারটি আমাদের ঐতিহ্য। একবিন্দু জলরাশি এখান থেকে কমানো যাবে না। জলরাশির আয়তন পাড় বাঁধাইয়ে যেন সংকুচিত না হয়। কারণ তালপুকুর ও রাণীর দীঘির ক্ষেত্রে জলরাশির আয়তন কমিয়ে আনা হয়েছে। ওয়াকওয়ের পাশে বাগান ও বৃক্ষায়ন চলবে কিন্তু কোন দোকান বা বাণিজ্য কেন্দ্র যেন না বসে, সে দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। তবে ধর্মসাগরে ওয়াকওয়ে না করে এখনকারমত রাখাই পরিবেশসম্মত। পুরাতন গোমতির দুই পাড় বাধাই ও সবুজায়ন করে বিশাল ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা যায়। গোমতীর গতিপথ নষ্ট করে হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে সেস্থলে ব্রিজ তৈরি করে ওয়াকওয়ে ও দুইপাড়ের জনগণের যোগাযোগ উন্নয়ন করে দিয়ে গোমাতীর চাঁদপুর থেকে কাপ্তানবাজার পর্যন্ত বোট সার্ভিস চালু করলে প্রাণভরে বাতাস খেতে খেতে ভ্রমণ করতে পারত। গোমাতীর পানি এখন দখল দূষণে যে অবস্থায় উপনিত, অচিরেই পুরাতন গোমতীর দুপারের অধিবাসীরা বিভিন্ন রোগে ও অসুবিধায় আক্রান্ত হতে বাধ্য।
প্রত্যেকটি ফ্যাক্টরীতে ঊঞচ বসিয়ে যদি তা শহরের বাহিরে ফেলা যায় তবে দক্ষিণ কোতয়ালীর লোকজন ইপিজেডের দূষিত পানির যন্ত্রনা থেকে রক্ষা পেত। সেন্ট্রাল ইটিপি ইপিজেডে থাকলেও নানা অজুহাতে কাজ করছেনা বিধায় প্রতিটি ফ্যাক্টরী ইটিপি চালু করে পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন করা জরুরী।
যানযট বন্ধ করতে হলে ফুটপাত ও রাস্তার শৌল্ডারের ভাসমান দোকানসমূহ বন্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। অনেক রাস্তার পার্শ্বে সিটি কর্পোরেশনের জায়গা আছে, যাতে তিন চার তলা ভবন তৈরি করে নীচতলায় গাড়ীর গ্যারেজ বা গাড়ী রাখার স্থান দেয়া যায়। এতে সমস্ত ভাসমান দোকানদারদের স্থাপনা হয়ে যাবে, সিটির সৌন্দর্য্য ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা হবে। রাজগঞ্জ বাজার, রাণীর বাজার মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং করে নীচতলা খালি রেখে এ অবস্থা বাস্তবায়ন করা যায়। রাস্তার চেয়ে ড্রেন উঁচা তাই রাস্তার পানি ড্রেনে যায় না। ড্রেনের পানি রাস্তায় নেমে আসে, তাই ড্রেনগুলো রাস্তার নীচে থাকতে হবে।
সবুজায়নের মারাত্মক অভাব। স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে বড় বড় বৃক্ষসমূহ নিধন করা হয়েছে। পার্কের পার্শ্বের রাস্তার গাছগুলি নিধন করা হয়েছে, আদালত রাস্তাটি ও বৃক্ষনিধনে আক্রান্ত ঐ সমস্ত স্থানসমূহে এবং রাস্তার পাশের শৌল্ডার সবুজায়নের নিমিত্তে বৃক্ষরাজি লাগিয়ে শহরকে অক্সিজেনে ভরপুর করা হোক। প্রত্যেক বাড়ীর নতুন ভবনের ছাদে বাগান বাধ্যতামূলক করে দিলে সবুজায়ন সম্পূর্ণ হবে আমাদের শহরে।
অনেক উৎসাহ বেড়েছে ছাদকৃষিতে মানুষ ভেবেই পাচ্ছে না আমাদের ছাদে পেয়ারা ফলানো সম্ভব। এ আগ্রহের স্থান থেকেই ছাদকৃষিতে কুমিল্লার লোকজন ছাদকৃষি নিয়ে আন্দোলিত হয়েছে। ছাদের সামান্য জায়গাটুকু কাজে লাগানোর জন্য এর চেয়ে বড় কোন উদ্যোগ থাকতে পারে না। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, গৃহিনী সবাই ছাদে চাষ করছেন লাউ, চালকুমড়া, শিম, ঝিঙ্গে, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম, গাজরসহ নানাধরনের সবজি। অনেকে মাল্টা, আম, লেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, ডালিমের মত ফলও ফলাচ্ছেন। এতে শুধু পারিবারিক চাহিদাই মিটছে না, স্বাস্থ্য সম্পন্ন নিরাপদ খাবারেরও নিশ্চয়তা আসছে। যারা ফলাচ্ছেন তারা মানসিক প্রশান্তিও পাচ্ছেন, সবুজায়নে নিজেকে নিবেদিত করতে পারছেন। বলাবলি করতে শুনা যায়, ছাদকৃষিতে উৎপন্ন ফলফলাদি আদান প্রদানের মাধ্যমে পাশের বাসার সঙ্গে হৃদ্যতা বাড়ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঋঅঙ অনেকদিন থেকে বলে আসছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সামলাতে জলবায়ু সহনশীল কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। ছাদকৃষি সেই প্রচেষ্টারই একটি অংশ এখন মানুষ ছাদকৃষির ব্যাপারটি বুঝে ফেলেছে। আগে যারা এটাকে নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা করেছিল তারাই এখন ছাদকৃষিকে স্বাগত জানাচ্ছে। প্রত্যেকটি শহরবাসী নিজের ছাদে ক্ষুদ্র কৃষক হয়ে উঠুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। দেখা যায়, ধীরে ধীরে অনেক ছাদ সবুজ রূপ নিচ্ছে। এতে কমছে তাপমাত্রা, বাড়ছে অক্সিজেন এবং শীতল হচ্ছে শহর। একই সঙ্গে পূরণ হচ্ছে মানুষের খাদ্য চাহিদার বিরাট একটা অংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও অনেকটা কমছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকগুলি একদিনে পরিবর্তন সম্ভব নয়। ছাদকৃষি আমাদের দেখিয়েছে একটি ছোট উদ্যোগও বড় পরিবর্তনের আশা জাগাতে পারে। প্রতিটি অট্টালিকাবাসী তাঁর ছাদে যদি কিছু গাছ লাগায়, তবে হাজার হাজার ছাদ একত্রিত হয়ে গড়ে তুলবে আমাদের সবুজ কুমিল্লা। এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। ধূসর ছাদকে সবুজায়নে ফেরানোর এক মহৎ উদ্যোগ বা সংগ্রাম। প্রতিবছর চাষযোগ্য জমি কমছে, নগরায়নে কমছে গ্রামীণ চাষযোগ্য ভূমি। এমন বাস্তবতার নিরিখে ছাদকৃষি আর বিলাসিতা নয়, বর্তমান সময়ের প্রয়োজনীয় দাবী।
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ