ভাস্কর মজুমদার
মা, আজকে ড্রইং ক্লাস আছে। আমি একটা বিমান আঁকবো।”
সকালবেলার শেষ কথাটা ছিল এমন।
পেছনে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে দৌড়াচ্ছিল সে, যেন দুনিয়ায় তার চেয়ে আনন্দিত আর কেউ নেই।
সেই স্কুলে আজ ড্রইং ক্লাস হয়েছে, বিমান টাও আঁকা হয়েছে।
কিন্তু সেই মুখটাও আর নেই। শুধু থেকে গেছে আগুনে পোড়া বই, গলে যাওয়া বোতাম, আর খাতার ভাঁজে ছাই হয়ে থাকা সেই বিমানের ছবি টা।
একটা যুদ্ধবিমান যখন আকাশ চিরে ডিগবাজি খেয়ে নেমে আসে, আমরা ধরে নিই সেটা অনুশীলন, কায়দা, মহড়া।
কিন্তু এখন ভাববো —এই আকাশের নিচে আছে একটা শ্রেণিকক্ষ,
যেখানে কিছু ছোট্ট শিশু একে অপরকে বলছিল—দেখ, আমি কত সুন্দর লিখতে পারি।”
সেদিন আকাশ থেকে ঝরে পড়েছিলো আগুন।পড়েছিলো শিশুদের মাথার উপর।
একজনের চোখ গলে গেল, আরেকজনের পোড়া মুখ চেনা গেল না।
একজনের টিফিনবক্স পুড়ে গেছে।
আর একটা পেন্সিল—যেটা দিয়ে আমার নাম ফারিয়া, আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি” লেখা হয়েছিল—সেটাও ছাইয়ের পাশে পড়ে ছিল নিঃশব্দে।
রাষ্ট্র কী করবে?
একটা বিবৃতি দিবে।
একটা তদন্ত কমিটি বসাবে।
একটা ফাইল খুলবে, যেখানে লেখা থাকবে—দুর্ঘটনা, দুঃখজনক।
কিন্তু যাদের সন্তান আর কোনোদিন ফিরবে না, তাদের কাছে কোনো শব্দই যথেষ্ট না।
তাদের কাছে কোনো তদন্ত আর কোনো তদন্তকারী কিছুই ফেরাতে পারবে না। তাদের কাছে শুধুই আছে সেই পোড়া গন্ধ, যা এখনও তাদের গায়ে লেগে আছে।
বুকের ভেতর জেগে আছে একটাই প্রশ্ন—এই মৃত্যু কী অনিবার্য ছিল?”
এই যে যুদ্ধবিমান, এই যে প্রশিক্ষণ, এই যে মহড়া—
সব কিছুই কি এমন জায়গায় হতে হবে, যেখানে শিশুরা খাতা খুলে বসে?
শ্রেণিকক্ষ কি নতুন টার্গেট জোন?
আর শিশুরা কি এখন কলেটারাল ড্যামেজ”?
এটা কেবল পাইলটের ব্যর্থতা না।এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। এটা আমাদের চেতনাহীনতার জ্বলন্ত চিহ্ন।
আজ যারা বেঁচে গেছে, তাদের শরীরে পোড়া দাগ থাকবে সারাজীবন।
আর যাদের হারিয়ে ফেলেছি, তাদের গল্প থাকবে না কোনো ইতিহাসের বইয়ে—
কারণ তারা ছিল ছোট মানুষ”।
না ভাই, তারা ছোট ছিল না।তারা ছিল ভবিষ্যৎ।
তারা ছিল প্রতিটি মায়ের হৃদয়ের টুকরো, প্রতিটি জাতির স্বপ্নের নকশা।
আর আজ সেই স্বপ্নটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এই দেশের খাতায়, সেই আগুনের ছায়া লেখা থাকবে চিরকাল।
(এটা দুর্ঘটনা না। এটা রাষ্ট্রের অবহেলা।
আর যে রাষ্ট্র শিশুদের বাঁচাতে পারে না,
সে যুদ্ধবিমান উড়িয়েই কেবল নিজের দায় মেটাতে পারে না।)
ভাস্কর মজুমদার: পুরাতন চৌধুরী পাড়া, কুমিল্লা। জেনারেল ম্যানেজার ( মার্চেন্ডাইজিং) - ব্র্যাক আড়ং।
মা, আজকে ড্রইং ক্লাস আছে। আমি একটা বিমান আঁকবো।”
সকালবেলার শেষ কথাটা ছিল এমন।
পেছনে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে দৌড়াচ্ছিল সে, যেন দুনিয়ায় তার চেয়ে আনন্দিত আর কেউ নেই।
সেই স্কুলে আজ ড্রইং ক্লাস হয়েছে, বিমান টাও আঁকা হয়েছে।
কিন্তু সেই মুখটাও আর নেই। শুধু থেকে গেছে আগুনে পোড়া বই, গলে যাওয়া বোতাম, আর খাতার ভাঁজে ছাই হয়ে থাকা সেই বিমানের ছবি টা।
একটা যুদ্ধবিমান যখন আকাশ চিরে ডিগবাজি খেয়ে নেমে আসে, আমরা ধরে নিই সেটা অনুশীলন, কায়দা, মহড়া।
কিন্তু এখন ভাববো —এই আকাশের নিচে আছে একটা শ্রেণিকক্ষ,
যেখানে কিছু ছোট্ট শিশু একে অপরকে বলছিল—দেখ, আমি কত সুন্দর লিখতে পারি।”
সেদিন আকাশ থেকে ঝরে পড়েছিলো আগুন।পড়েছিলো শিশুদের মাথার উপর।
একজনের চোখ গলে গেল, আরেকজনের পোড়া মুখ চেনা গেল না।
একজনের টিফিনবক্স পুড়ে গেছে।
আর একটা পেন্সিল—যেটা দিয়ে আমার নাম ফারিয়া, আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি” লেখা হয়েছিল—সেটাও ছাইয়ের পাশে পড়ে ছিল নিঃশব্দে।
রাষ্ট্র কী করবে?
একটা বিবৃতি দিবে।
একটা তদন্ত কমিটি বসাবে।
একটা ফাইল খুলবে, যেখানে লেখা থাকবে—দুর্ঘটনা, দুঃখজনক।
কিন্তু যাদের সন্তান আর কোনোদিন ফিরবে না, তাদের কাছে কোনো শব্দই যথেষ্ট না।
তাদের কাছে কোনো তদন্ত আর কোনো তদন্তকারী কিছুই ফেরাতে পারবে না। তাদের কাছে শুধুই আছে সেই পোড়া গন্ধ, যা এখনও তাদের গায়ে লেগে আছে।
বুকের ভেতর জেগে আছে একটাই প্রশ্ন—এই মৃত্যু কী অনিবার্য ছিল?”
এই যে যুদ্ধবিমান, এই যে প্রশিক্ষণ, এই যে মহড়া—
সব কিছুই কি এমন জায়গায় হতে হবে, যেখানে শিশুরা খাতা খুলে বসে?
শ্রেণিকক্ষ কি নতুন টার্গেট জোন?
আর শিশুরা কি এখন কলেটারাল ড্যামেজ”?
এটা কেবল পাইলটের ব্যর্থতা না।এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। এটা আমাদের চেতনাহীনতার জ্বলন্ত চিহ্ন।
আজ যারা বেঁচে গেছে, তাদের শরীরে পোড়া দাগ থাকবে সারাজীবন।
আর যাদের হারিয়ে ফেলেছি, তাদের গল্প থাকবে না কোনো ইতিহাসের বইয়ে—
কারণ তারা ছিল ছোট মানুষ”।
না ভাই, তারা ছোট ছিল না।তারা ছিল ভবিষ্যৎ।
তারা ছিল প্রতিটি মায়ের হৃদয়ের টুকরো, প্রতিটি জাতির স্বপ্নের নকশা।
আর আজ সেই স্বপ্নটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এই দেশের খাতায়, সেই আগুনের ছায়া লেখা থাকবে চিরকাল।
(এটা দুর্ঘটনা না। এটা রাষ্ট্রের অবহেলা।
আর যে রাষ্ট্র শিশুদের বাঁচাতে পারে না,
সে যুদ্ধবিমান উড়িয়েই কেবল নিজের দায় মেটাতে পারে না।)
ভাস্কর মজুমদার: পুরাতন চৌধুরী পাড়া, কুমিল্লা। জেনারেল ম্যানেজার ( মার্চেন্ডাইজিং) - ব্র্যাক আড়ং।