পথশিশুদের নিয়ে অনন্য আয়োজন অন্বেষণের

নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image

কারও বাবা নেই, কারও মা নেই, কারও পরিবার আবার দরিদ্রসীমার নিচে। পথে পথে কাটে যাদের জীবন। কখনও রেলস্টেশনে, কখনও বাজে আড্ডায়, কখনও অল্পবয়সে কাজের সন্ধানে ছুটে চলা। এলোমেলো দিশেহারা এসব পথশিশুদের পড়াশোনা ও জীবনধারণ ছিল একরকম অনিশ্চিত। হঠাৎ তাদের মনে আশার সঞ্চার করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অন্বেষণ। তাদের অনেকের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় এ সংগঠনটি।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও এই পথশিশুদের নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে সংগঠনটি। রোববার ওই পথশিশুদের নিয়ে একদিনের ইফতার আয়োজন করা হয়। দেওয়া হয় ঈদ সামগ্রী। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে সব শিশুকে রঙিন জামাকাপড় দেয় অন্বেষণ। কুমিল্লার একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় এই আয়োজন করা হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের সামনে সুন্দরভাবে ইফতার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভালো খাবার দেখে চোখ ছলছল করছে তাদের। ইফতারের পর সবার হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় সেমাই, চিনি, কিসমিসসহ অন্যান্য ঈদ সামগ্রী। এরপর নতুন জামা। নতুন জামা পেয়ে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায় শিশুদের মনে। শিশু-কিশোররা পোশাক পেয়ে দাপাদাপি শুরু করে। তাদের হইহুল্লোড় আর উদ্দীপনায় হল রুমে অন্যরকম আবহ বিরাজ করে।

৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রিফাত জানায়, আমি প্রথম শ্রেণি থেকে অন্বেষণ পাঠশালায় আসি। সংগঠনের ভাইয়েরা অনেক আদর করে। আজকে ভালো খাবার দিয়েছে। নতুন জামা ও ঈদের বাজার পেয়েছি।

এসএসসি পরীক্ষার্থী হামীম জানায়, আমি মডার্ন স্কুলের ছাত্র। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিব। আমার বাবা ভ্যানগাড়ি চালান, মা মানুষের বাসায় কাজ করেন। অন্বেষণ না থাকলে আমার পড়াশোনা হতো না। পড়াশোনার সব খরচ এই ভাইয়া-আপুরা বহন করেছে।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ মিজান জানান, অভাবের তাড়নায় এই শিশুরা কাজকর্মে লেগে যায়। পড়াশোনা তো নয়ই, বিভিন্ন অপরাধের সাথেও অনেকে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে কুমিল্লা টাউন হলে আমরা কিছু পথশিশুকে পড়ানোর দায়িত্ব নিই। কিন্তু অনেক অভিভাবক তাতে সায় দেন না। অনেক কষ্ট করে তাদের রাজি করাই। সেখানে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে কষ্ট হয়। এরপর শহরতলির দৌলতপুর রেলগেটে অন্বেষণ পাঠশালা নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। ২০১৩ সাল থেকে সেখানে বিনামূল্যে শিশুদের পাঠদান করাই। বর্তমানে ৩৮জন ছাত্রের দেখাশোনা করছি। অনেক ছাত্র মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে ফেলেছে। পথশিশুদের অনেকে বিভিন্ন স্কুলের ফার্স্ট বয়। এটা ভাবতেই অন্যরকম লাগে। ওই শিশু-কিশোরদের নিয়ে প্রতি রমজানে একটু ভালো খাওয়া ও ভালো পোশাক দেওয়ার চেষ্টা করি। এই কাজে সমাজের অনেক চিত্তবান মানুষ আমাদের সাথে শরিক হন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত