আট মাস পর মায়ের কোলে চার বছরের শিশু হোসাইন

দেবীদ্বার প্রতিনিধি
Thumbnail image

মায়ের সাথে বাবাকে খোঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হয় চার বছরের শিশু হোসাইন।

অবশেষে আট মাস পর গতকাল বুধবার মায়ের কোলে ফিরে গিলেন সেই হোসাইন। হোসাইনকে ফিরে পেতে পরিবারকে পাড়ি দিতে হয়েছে বড় বড় বিপদ। হোসাইনের মা এসব বিপদ পাড়ি দিলেও হসপিটালের আইসিইউতে মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ছেন নানী মনোয়ারা বেগমকে।

হোসাইনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, চার বছরের শিশু হোসাইন মা জরিনার সাথে মামার বাড়ি নোয়াখালি জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার উড়িরচর গ্রামে থাকেন। বাবা আলমীর হোসেন থাকে চট্টগ্রাম শহরে। কাজ করেন একটি দোকানে। কিন্তু হঠাৎ করেই মা ও ছেলের খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করে দেয় আলমগীর হোসেন। জানতে পারেন তিনি আরেক বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। তাই মায়ের সাথে বাবাকে খোঁজতে চট্টগ্রামে যায় চার বছরের শিশু হোসাইন। সেখানে বাবাকে খুঁজে না পেয়ে ট্রেনে চড়ে বাড়িতে রওনা হয় এবং ভুল করে ঢাকার ট্রেনে উঠে পড়েন তারা। কুমিল্লার লাকসামে এসে তিন অপহরন কারী হোসাইনকে নিয়ে নেমে পড়েন ট্রেন থেকে। মা জরিনা তাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে যায় ঢাকায়। পরে হোসাইনের মা জরিনা বাড়ি ফিরলেও স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি পাগল প্রায়।

নানী, মামা সহ আত্বীয় স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও হোসাইনের কোন সন্ধ্যান পায় নাই। এদিকে লাকসাম স্টেশনে হোসাইন কান্নকাটি শরু করলে অপহরনকারীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর দেবীদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের আশ্রয়ে দিয়ে যায়। সেখানে ছোট সোনামনিদের সাথে কাটে হোসাইনের আট মাস। গত ১ আগষ্ট স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় হোসাইনের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। ২ আগষ্ট হোসাইনের মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথা হয় তার । পরদিন ৩ আগষ্ট হোসাইনের মা জরিনা, নানী মনোয়ারা ও অলিউল্লাহ নামে সম্পর্কে মামা তিনজন তাকে দিতে দেবীদ্বার শিশু পরিবারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কংশনগরে এসে সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত হন তিনজনই। একই সিএনজিতে থাকা ওমান প্রবাসী মোঃ ইব্রাহীম সরকার নামের এক ব্যাক্তি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার ছোট বোন ফারজানা আক্তার (১৯) মারাত্মক আহত হয়ে বর্তমানে রাজারবাগ বি-বারাকা হসপিটালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এ দূর্ঘটনার খবর পেয়ে দেবীদ্বার উপজেলা যুগান্তর প্রতিনিধি মোঃ আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে একদল সাংবাদিক গিয়ে তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাত ২টায় নানী মনোয়ারা বেগমের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু পথের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থা আরো অবনতি হলে মাতুয়াইলে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চারদিন অজ্ঞান থাকার পর বুধবার সকালে নানীর জ্ঞান ফিরেন। একই দিনে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হোসাইনের মা জরিনা রিলিজ পান। পরে তিনি দেবীদ্বার শিশু পরিবারে এসে হোসাইনকে নিতে আবেদন করেন। বুধবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিক ও গন্যমান্য ব্যাক্তিদের উপস্থিতিতে দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন ছোট্ট শিশু হোসাইনকে তার মায়ের হাতে তুলে দেন। এর আগে সকালে দেবীদ্বার শিশু পরিবারে মায়ের সাথে হোসাইনের দেখা হলে আবেকগণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

হোসাইনের মা জরিনা বলেন, সকল সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই, তাদের কারন আমার বুকের ধনকে খুঁেজ পেয়েছি। এছাড়াও সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আমরা তারাতারি সুস্থ হতে পেরেছি এবং আমার মায়ের চিকিৎসা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দেবীদ্বারের সাংবাদিক মোঃ আক্তার হোসেন জানান, গত এক মাস পূর্বে হোসাইনের পরিবারের সন্ধ্যান পেতে কাজ শুরু করেন স্থানীয় কয়েজন সাংবাদিককে সাথে নিয়ে। বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশসহ সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার প্রচারনা শুরু করেন তারা। গত ১ আগষ্ট তারা হোসাইনের পরিবারে সন্ধ্যান পান।

দেবীদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের তত্ববধায়ক বরুন চন্দ্র দে বলেন, হোসাইন খুবই শান্ত ও একজন ভালো ছেলে, সে আমাদের শিশু পরিবারে প্রায় আট মাস ধরে ছিল। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর হোসাইনকে লাকসাম পুলিশ দিয়ে যান। সাংবাদিক আক্তার হোসেনের সহ কয়েকজন সাংবাদিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সন্ধ্যান মিলে হোসাইনের পরিবারের। তার পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় হোসাইনকে। তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুবআ আনন্দিত।

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান বলেন, দেবীদ্বার সরকারি শিশু পরিবারে আশ্রয় প্রাপ্ত হোসাইনের মা এবং তার নানা এসে আবেদন করলে আমরা হোসাইনকে তাদের নিকট তুলে দেই। এর আগে গত ৩ তারিখ মা ও নানী সহ তিনজন দেবীদ্বারে আশার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্বক ভাবে আহত হন। সাংবাদিক আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় সাংবাদিকরা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাদের সুস্থ করেন। তবে হোসাইনের নানী এখনো আইসিইউতে চিকিৎসাধীর রয়েছেন। এই দরিদ্র ও অসহায় পরিবারটি পাশে দাড়িয়ে একটি প্রাইভেট হাসপাতলে আইসিইউর খরচ বহন করে তাদের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি আমাদের সমাজে একটি দৃষ্টান্ত ও অনুকরনীয় হয়ে থাকবে। আমরা হোসাইনের ব্যাপারে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখবো। তারা যদি দেবীদ্বার বা নিকটস্থ শিশু পরিবারে বাচ্চাটিকে রাখতে চায় তাহলে আমরা সহযোগিতা করবো।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত